প্রবেশপদ ‘সহকারী শিক্ষক’কে বিসিএস ক্যাডারভুক্তকরণসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই তারা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র শীর্ষ নেতারা।
তাদের অভিযোগ- দীর্ঘ ৫০ বছরের বঞ্চনা, পদসোপানের বৈষম্য ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে বহুদিন ধরে আন্দোলন করলেও সমাধান হয়নি। এবার সহকারী শিক্ষকরা আরও কঠোর কর্মসূচির পথে হাঁটছেন।
সহকারী শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো—সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ, এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড (ক্যাডার) ধরে চার থেকে ছয় স্তরের পদসোপান প্রবর্তন এবং তার ভিত্তিতে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার গেজেট প্রকাশ।
শিক্ষক নেতারা জানান, দাবিগুলো ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পূরণ না হলে তারা কর্মবিরতি শুরু করবেন। এতে চলমান বার্ষিক পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শন, খাতা মূল্যায়ন, ফল প্রস্তুতকরণ ও নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বর্জন করা হবে।
এ ছাড়াও ঢাকায় মহাসমাবেশ ও সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’সহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান বলেন, শিক্ষকরা সবসময় দুটি বিষয় দাবি করে আসছেন—আর্থিক সুবিধা ও মর্যাদা। আর্থিক সুবিধা নিয়ে আমাদের কোনো দাবি নেই; আমরা নবম গ্রেড পাচ্ছি। কিন্তু মর্যাদা পাই না। মর্যাদার প্রশ্নে আমরা চারটি দাবি জানিয়ে আসছি।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কথা বলে সরকার তা বাস্তবায়ন করছে না। এতে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ। বাধ্য হয়েই বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যেই আমরা কর্মসূচিতে যাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
বঞ্চনার শিকার সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরা
সহকারী শিক্ষক নেতারা জানান, তাদের দাবিগুলো নতুন নয়, বরং বহুদিনের বকেয়া। বিধি অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকেই নবম গ্রেড পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সহকারী শিক্ষকদের পদ দশম গ্রেডেই রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ২০০৪ সালে ১৮তম গ্রেডে ছিলেন; গত ২০ বছরের আন্দোলনের পর এখন তারা ১১তম গ্রেডে উন্নীত হতে যাচ্ছেন।
কিন্তু ১৯৭৪ সাল থেকেই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে; ৫০ বছরেও পরিবর্তন হয়নি। একই গ্রেডের পরিবর্তনযোগ্য পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরদের ১৯৯৬ সালে নবম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও সহকারী শিক্ষকরা এখনো দশম গ্রেডে রয়ে গেছেন।
সমগ্রেডের সমাজসেবা কর্মকর্তা, পুলিশের ইন্সপেক্টর, সাব-রেজিস্টারসহ অসংখ্য পদ গত এক দশকে নবম গ্রেডে উন্নীত হলেও সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক পদটি রহস্যজনকভাবে নবম গ্রেডে উন্নীত হয়নি।
অন্য দিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট ১০ হাজার ৮৮৪ পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৭ হাজার ৯০০ শিক্ষক। অর্থাৎ ২৭.৪ শতাংশ পদ শূন্য। ফলে শিক্ষকস্বল্পতার কারণে বাকি শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে, যা শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং পাঠদানের মান কমাচ্ছে। দেড়গুণ বেশি ক্লাস নিলেও তাদের বেতন এখনো দশম গ্রেডেই সীমাবদ্ধ—বিগত ৫০ বছরেও পদোন্নতি বা গ্রেড পরিবর্তনের সুবিধা মেলেনি।
জানা গেছে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২০১৭ সাল থেকে বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের প্রায় ৫০ শতাংশই ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা এবং ২০২২ সালের পিএসসির বিশেষ নন-ক্যাডার পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত।