বাংলাদেশের পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা এখন চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই ব্যাংকে জমা রাখা নিজেদের অর্থ তুলতে পারছেন না, আবার মেয়াদপূর্তির পর প্রতিশ্রুত মুনাফাও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো হলো—এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
টাকার জন্য গ্রাহকদের হাহাকার
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে এক্সিম ব্যাংকের এক শাখায় ঘটেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। প্রবাসী জুয়েল আচার্য্য ও তাঁর স্ত্রী লিপি আচার্য্য ২০১৯ সালে “মুদারাবা সুপার সেভিং ডিপোজিট” স্কিমে যথাক্রমে ১০ লাখ ও ৮ লাখ টাকা জমা দেন। ব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ছয় বছরে অর্থ দ্বিগুণ হবে—অর্থাৎ প্রায় ১৬.২৫% মুনাফা।
কিন্তু চলতি বছরের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হলে ব্যাংক জানায়, তারা এখন কেবল ৬.২৫% হারে মুনাফা দেবে। ফলে ২০ লাখ টাকার জায়গায় জুয়েল আচার্য্য পাবেন মাত্র ১৩ লাখ টাকা, আর তাঁর স্ত্রী ১১ লাখ টাকা।
জুয়েল আচার্য্য এ ঘটনাকে “প্রকাশ্য প্রতারণা” আখ্যা দিয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। তাঁর মতো আরও অনেক গ্রাহকও একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।
সামান্য টাকা তুলতেও ভোগান্তি
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, চট্টগ্রাম—জানিয়েছে, এই পাঁচটি ব্যাংকে গ্রাহকরা কয়েক হাজার টাকার বেশি তুলতে পারছেন না, কেউ কেউ তো একেবারেই অর্থ পাচ্ছেন না। ফলে হাজারো মানুষ দিন কাটাচ্ছেন দুশ্চিন্তা, কান্না আর অনিশ্চয়তায়।
সংগঠনের আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচি বলেন,
“যারা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের সম্পদ দ্রুত জব্দ করে বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
সরকারের সহায়তাও ফল দেয়নি
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতকে টিকিয়ে রাখতে ৫২ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেয় এবং ১৪টি ব্যাংকের পর্ষদ বিলুপ্ত করে। কিন্তু এত বিপুল সহায়তাও ৫ ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৯২ লাখ গ্রাহকের সঞ্চয় ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টার উদ্বেগ
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন,
“দেশের ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থই এখন বাইরে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘দুশ্চিন্তার কিছু নেই’—এই বার্তা গ্রাহকদের কাছে উপহাসের মতো শোনাচ্ছে।”
একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত
ব্যাংক খাতের এই সংকট নিরসনে গত ৯ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।
নতুন ব্যাংকের সম্ভাব্য নাম হতে পারে — “ইন্টার ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক” বা “সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (PLC)”।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান,
“একীভূত ব্যাংক আগের সব দায় ও সম্পদ গ্রহণ করবে। কোনো কর্মচারী চাকরি হারাবেন না, আমানতকারীর টাকাও হারাবে না।”
তবে বাস্তবে গ্রাহকদের হাতে এখনো টাকা পৌঁছায়নি। তাই প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আতঙ্ক ও হতাশা থেকে মুক্ত নয় লাখ লাখ আমানতকারী।