থাইরয়েড—নীরব কিন্তু ভয়ংকর একটি রোগ
থাইরয়েডে কেন শুধু ওষুধে পূর্ণ সমাধান আসে না?
থাইরয়েড চাপা নয়—ভেতর থেকে সুস্থ হওয়ার পদ্ধতি-
থাইরয়েডের কারণে শরীর শুকিয়ে যাওয়া আর মোটা হয়ে যাওয়া—দুটোই ভিন্ন ধরনের থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ। এগুলোর আলাদা আলাদা নাম আছে:
১. থাইরয়েডের কারণে শরীর শুকিয়ে যাওয়া — এটাকে কী বলে?
যখন শরীর অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে যায়, ওজন কমে যায়, বুক ধড়ফড়, হাত কাঁপা, ঘাম বেশি আসে — তখন সাধারণত কারণ হলো Hyperthyroidism (হাইপারথাইরয়েডিজম)।
২. থাইরয়েডের কারণে মোটা হয়ে যাওয়া — এটাকে কী বলে?
যখন থাইরয়েড কম কাজ করে— ঘুম বেশি পায়, শরীর ভারি লাগে, ফুলে যায়, ওজন বাড়ে— তখন কারণ হলো Hypothyroidism (হাইপোথাইরয়েডিজম)।
থাইরয়েড হলে শরীরে মারাত্মক যে সমস্যাগুলো হতে পারে——-
হৃদযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা /হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়–
১-হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে যায়
২-হঠাৎ হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া / কমে যাওয়া
৩-হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে যাওয়া
৪-হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি
৫-ব্লাড প্রেসার অস্বাভাবিক হওয়া
👉 হাইপারথাইরয়েড হলে হার্ট খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যা
১-তীব্র মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
২-মুড সুইং
৩-বিষণ্নতা
৪-মনোযোগ কমে যাওয়া
৫-ভুলে যাওয়া
৬-স্নায়বিক দুর্বলতা ও হাত–পা কাঁপা
👉 অনেক রোগী আগে বুঝতেই পারে না যে এটি থাইরয়েডের কারণ।
মেটাবলিজমের বড় ধরনের ক্ষতি
১-শরীর হঠাৎ শুকিয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া
২-খাবার থেকে শক্তি না পাওয়া
৩-ক্লান্তি ও দুর্বলতা সবসময় থাকা
৪-কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া (হাইপোথাইরয়েডে)
নারীদের প্রজনন ও পিরিয়ড সমস্যা
১-পিরিয়ড অনিয়ম
২-অতিরিক্ত ব্লিডিং / খুব কম ব্লিডিং
৩-ডিম্বাশয় দুর্বল হওয়া
৪-গর্ভধারণে সমস্যা
৫-গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়া
👉 থাইরয়েড ঠিক না হলে সন্তান ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়।
ত্বক, চুল ও নখের ক্ষতি
১-চুল প্রচণ্ড ঝরা
২-ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়া
৩-নখ ভঙ্গুর হওয়া
৪-মুখে ফোলা ভাব
পরিপাকতন্ত্রে বড় সমস্যা
১-কোষ্ঠকাঠিন্য (Hypothyroid)
২-ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা (Hyperthyroid)
৩-অম্লত্ব
৪-পেটে ব্যথা
কিডনি ও লিভারের উপর চাপ
১-পানি জমে শরীর ফুলে যাওয়া
২-কিডনি ফাংশন কমে যাওয়া
৩-এনজাইমের পরিবর্তন ও লিভারের ক্ষতি
রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে রক্তনালি ব্লক হওয়া
১-এলডিএল / খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি
২-রক্তনালি সংকুচিত হয়ে স্ট্রোক বা হার্ট ব্লকের ঝুঁকি
হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
১-ক্যালসিয়াম শোষণে সমস্যা
২-দ্রুত হাড় ক্ষয়
৩-অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি
নার্ভের সমস্যা
১-হাত–পা অবশভাব
২-নার্ভের ব্যথা
৩-পেশিশক্তি কমে যাওয়া
ঘুমের জটিলতা
১-ঘুম না আসা
২-অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব
৩-ঘুমের মান খারাপ হওয়া
চোখের মারাত্মক সমস্যা (বিশেষ করে Hyperthyroid) চোখে বিপদজনক পরিবর্তন-
১-চোখ উঁচু হয়ে যাওয়া / চোখ বের হয়ে আসা।
২-চোখে জ্বালা
৩-ডাবল ভিশন
৪-দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা
অন্ধত্বের ঝুঁকি (চরম পরিস্থিতিতে)
গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য ——————
থাইরয়েডের ভয়ংকর প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে—সঠিক চিকিৎসার সাথে প্রাকৃতিক সাপোর্ট দরকার:—
থাইরয়েডের হরমোন যদি বেশি হয়ে যায় (Hyperthyroidism) বা কমে যায় (Hypothyroidism)—শরীর স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে।
এলোপ্যাথি + হলিস্টিক—দুটোই কেন প্রয়োজন?
অনেকে শুধু এলোপ্যাথি সেবন করেন।
এলোপ্যাথির কাজ হলো উপসর্গ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা—হরমোন, ব্যথা, প্রদাহ বা তীব্র সমস্যা কমানো।
হলিস্টিক/ইউনানী মেডিসিনের বৈশিষ্ট্য—-
হলিস্টিক মেডিসিন শরীরকে ভিতর থেকে পুনরুদ্ধার করার উপর জোর দেয়।
এটি শরীরের প্রাকৃতিক হিলিং সিস্টেমকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে, যেমন—
১- টক্সিন বা জমে থাকা বর্জ্য উপাদান কমাতে সহায়তা
২- রক্ত এবং অর্গান ফাংশন পরিস্কার ও শক্তিশালী করতে ভূমিকা
৩- হরমোনাল ব্যালেন্সে সহায়ক
৪- ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করা
৫- স্ট্রেস, ঘুম, হজমের স্বাভাবিকীকরণে সহায়তা
কেন Holistic medicine থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী?
১- শরীরের স্বাভাবিক হরমোন-ব্যালেন্স ফিরিয়ে আনার সহায়ক
২- মেটাবলিজম স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে
৩- অতিরিক্ত স্ট্রেস, ঘুমের সমস্যা ও ক্লান্তি কমাতে ভূমিকা রাখে
৪- ভেতর থেকে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে
৫- চুল পড়া, ত্বকের শুষ্কতা, স্নায়ুর দুর্বলতা কমাতে সহায়ক
৬- ওজন অস্বাভাবিকভাবে বাড়া বা কমা—এই দুই পরিস্থিতিকেই নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
অতএব–
প্রত্যেক থাইরয়েড রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মেডিসিন হল —
এলোপ্যাথি উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করে,
হলিস্টিক ভেতর থেকে পুনরুদ্ধার করে।
দুটো মিলেই দ্রুত স্থায়ী সুস্থ হতে দারুন ভূমিকা রাখে