মেটা প্ল্যাটফর্ম (ফেসবুক) ব্যবহার করে সহিংসতা উসকে দেওয়া, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলায় উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কড়া বার্তা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি মেটাকে এই আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায়। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ-সংক্রান্ত কন্টেন্টের ওপর বিশেষ নজরদারি বজায় রাখতে মেটাকে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকার মনে করছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সময়ে সংবাদমাধ্যমে হামলার পেছনে ফেসবুকের উসকানিমূলক কন্টেন্টের বড় ভূমিকা রয়েছে।
১২ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে গুলি করার পর ফেসবুকের মাধ্যমে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানো হয়। এমনকি তাঁর মৃত্যুকে সমর্থন জানিয়ে এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ডাক দিয়ে প্রকাশ্য পোস্ট করা হলেও মেটা তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি বলে সরকার অভিযোগ করেছে।
এই উসকানিমূলক প্রচারণার পরপরই রাজধানী ঢাকার প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানট ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে।
সহিংসতা রোধে মেটাকে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে: ১. কঠোর মডারেশন: বাংলাদেশ-সংক্রান্ত আধেয় বা কন্টেন্টের ক্ষেত্রে ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড’ আরও কঠোর ও প্রেক্ষাপট সংবেদনশীলভাবে প্রয়োগ করা। ২. বাংলা ভাষা পর্যালোচনা: বাংলা ভাষার কন্টেন্ট মডারেশন ও অনুভূতি বিশ্লেষণে (Sentiment Analysis) অধিক গুরুত্ব দেওয়া। ৩. তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা: সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা সংগঠিত ক্ষতির আহ্বান জানানো পোস্টগুলো দ্রুততম সময়ে অপসারণ করা। ৪. অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয়করণ: উসকানিদাতা অ্যাকাউন্টগুলো শনাক্ত করে সেগুলো অবিলম্বে নিষ্ক্রিয় করা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাস বা সহিংসতার ডাক দিয়ে দেওয়া যেকোনো পোস্টের বিষয়ে সরাসরি সরকারের কাছে রিপোর্ট করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, আজ শনিবার থেকেই নাগরিকরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন।
অভিযোগ জানানোর মাধ্যম:
WhatsApp: ০১৩০৮৩৩২৫৯২
E-mail: notify@ncsa.gov.bd
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ফেসবুকের উসকানিমূলক অপব্যবহার বন্ধ করা অপরিহার্য। নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে কোনো অশুভ শক্তি যেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সরকার সে ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।
শহীদ ওসমান হাদির জানাজা ও দাফন আজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।