জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সিপাহসালার এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সাধারণ ছাত্র-জনতা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ওসমান হাদীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন। সময়ের সাথে সাথে এই জমায়েত বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শাহবাগ মোড় পুরোপুরি অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কয়েক হাজার মানুষ, যার ফলে ওই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষায় বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। রাজপথের মিছিলে এখন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে— ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘ভারতের আগ্রাসন, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ এবং ‘আমরা সবাই হাদী হবো, গুলির মুখে কথা বলবো’-এর মতো কড়া স্লোগান।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে পল্টন বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুষ্কৃতকারীরা ওসমান হাদীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সহযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ওসমান হাদীর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর থামিয়ে দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যে, খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের মুখোশ উন্মোচন না করা পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
কেবল শাহবাগ নয়, রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, উত্তরা এবং পুরান ঢাকাতেও ছোট ছোট মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও ওসমান হাদীর গায়েবানা জানাজা এবং বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।