রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে নিয়ে দুঃসংবাদ দিয়েছে তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাদির মস্তিষ্কের ফোলা পূর্বের তুলনায় আরও বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে মেডিকেল বোর্ড রোগীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে।
১. মস্তিষ্কের অবস্থা: রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে পুনরায় করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, হাদির মস্তিষ্কের ফোলা পূর্বের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি নির্দেশ করছে। এটি ব্রেন স্টেমে আঘাত ও মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ফোলাজনিত চাপের কারণে ঘটেছে।
২. কার্ডিয়াক ও রক্তচাপ: ব্রেন ইনজুরির কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা পরিলক্ষিত হচ্ছে। রোববার তাঁর হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা চলছে।
৩. শ্বাসযন্ত্র: রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা ও মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি বা অবনতি হয়নি।
৪. কিডনি ও হরমোন: রোগীর কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের কিছু হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যা ইউরিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা করা হচ্ছে।
৫. রক্ত জমাট বাঁধা: রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা বর্তমানে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
৬. ব্লাড সুগার: রোগীর ব্লাড সুগার নিবিড়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে, কারণ সংকটাপন্ন অবস্থায় এর ওঠানামা একটি পরিচিত চ্যালেঞ্জ।
৭. সার্বিক অবস্থা: মেডিকেল বোর্ডের মতে, রোগীর সার্বিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। বোর্ড সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।
মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোগীর পরিবার বা পরিবারের মাধ্যমে সরকার যদি রোগীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে।
রোববার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক চিকিৎসক আবদুল আহাদ জানান, হাদির মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে আছে এবং পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
বোর্ড সকলের প্রতি অপ্রয়োজনে হাসপাতালে ভিড় না করা এবং কোনো ধরনের অনুমানভিত্তিক বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসী খুব কাছ থেকে হাদির মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় তিনি বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।