তিনশ আসনের মধ্যে ২৭২টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। বাকি রইলো আর মাত্র ২৮টি আসন। গতকাল দ্বিতীয় দফায় বিএনপির ৩৬ প্রার্থীর নাম ঘোষণায় ক্ষুব্ধ যুগপৎ আন্দোলনের জোট সঙ্গীরা। তারা বলছে, বিএনপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। যেসব আসনে জোটের প্রার্থীদের নাম আসার কথা, সেই সব আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। বিএনপির কাছে নির্বাচনপূর্ব যুগপৎ শরীকদের মূল্য কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকা প্রকাশ করেন।
এর আগে ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল। একদিন পরেই মাদারীপুর-১ আসনের ঘোষিত প্রার্থীর নাম স্থগিত করে বিএনপি।৩৬ তালিকা ঘোষণাসহ মোট ২৭২ টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বিএনপি। এই ঘোষণার পর জোটের শরিকদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। খালেদা জিয়ার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রার্থী ঘোষণা হবে বলেও অনেকে ভাবতে পারেননি।
এ বিষয়ে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জনকণ্ঠকে বলেন, আপনারা জানেন আমরা দীর্ঘ সময় খালেদা জিয়ার কারাবন্দি থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সাথে একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি। রাজপথে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছি। যুগপৎভাবে যেসব আসনে আমাদের হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলো, গুরুত্বপূর্ণ সেই সব আসনগুলোতে বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো ।কিন্তু গতকাল দ্বিতীয় দফা ৩৬টি আসনে আবার প্রার্থী দেওয়ায় আমাদের যুবপতের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম বাদ পড়ে গিয়েছে। যে আসনগুলোতে দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা ছিলো সে জায়গাগুলোতে নাম আসে নাই। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে খুব একটা আলোচনা করতে পারিনি। খালেদা জিয়ার এই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যে তারা দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণা করবে আমরা চিন্তা করতে পারেনি। আমরা দু-একদিনের মধ্যে জোটের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেব।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জকন্ঠকে বলেন, দ্বিতীয় দফা বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হল যে যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরীর ছিল তাদের জন্য আসন সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বিএনপি তাদের এককভাবে ২৭২টি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে ফেলছে। জোট নিয়ে তাদের ভাবনা এবং গুরুত্ব যে কমেছে সেটা প্রমাণ হলো। আমরা এগুলো অবশ্যই তাদের জানাব।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জনকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আজকে বিএনপির পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এটা শুধু বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে নয় পুরো জাতীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে , মীরজাফরী আচরণ করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা থেকে এই ফ্যাসিবাদীবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে যে দলগুলো সঙ্গী ছিল বিএনপির পক্ষ থেকে যে ওয়াদা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটি তারা ভঙ্গ করেছে। আমরা মনে করছি খালেদা জিয়াকে লন্ডন পাঠানোর আগে আবারো দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিএনপির রাজনীতির অপমৃত্যু ঘটেছে। আমাদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে আগামীতে বিএনপি যদি কখনো জনগণ ক্ষমতা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে কিংবা ক্ষমতায় যায় ঠিক একইভাবে পুরো জাতীর সঙ্গে বিএনপি এই ভাঁওতাবাজি প্রতিশ্রুতি এবং প্রতারণা করে যাবে।
ঘোষণা হওয়া ৩৬ জন প্রার্থী হলেন, ঠাকুরগাঁও -২ আসনে আব্দুস সালাম, দিনাজপুর-৫ একেএম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলু, নাটোর-৩ আসনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ -১ আসনে সেলিম রেজা, যশোর-৫ আসনে এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনে আমীর এজাজ খান, পটুয়াখালী-২ আসনে শহীদুল আলম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন, ঝালকাঠি-১ আসনে রফিকুল ইসলাম জামাল, টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ময়মনসিংহ-৪ আসনে আবু ওয়াহাব আখন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মজিবর রহমান ইকবাল, মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবির, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা- ৭ আসনের হামিদুর রহমান, ঢাকা-৯ আসনে হাবিবুর রশীদ, ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-১৮ আসনে এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজীপুর-১ আসনে মো. মজিবুর রহমান, রাজবাড়ী-২ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ফরিদপুর-১ খন্দোকার নাসিরুল ইসলাম, মাদারীপুর-১ আসনে নাদিরা আখতার, মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান, সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম, সিলেট-৪ আসনে আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে রেজা কিবরিয়া, কুমিল্লা-২ আসনে সেলিম ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মো. আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নাজমুল মোস্তফা আমীন ও কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন বলেন, আরো অনেকগুলো থেকে যাচ্ছে, ২৮টি থেকে যাবে। আমাদের যে এলায়েন্সের সঙ্গে যারা আছেন তাদেরগুলো এবং আমাদের দুই একটা আপনার ডিসিশন হবে সেগুলো আমরা আরো পরে ঘোষণা করব। বাকিগুলো আমরা যথাসময়ে ঘোষণা করব।