শীতকাল এলেই ত্বক রুক্ষ, খসখসে ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে—এটা আজকাল খুব সাধারণ সমস্যা। কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—অনেকেই বয়সের ছাপ, ত্বকে বলিরেখা, দাগছোপ বা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। বাজারচলতি দামি ক্রিম, সিরাম বা ফেসপ্যাক ব্যবহার করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না অনেকেই। তাই এখন রূপচর্চায় একটি প্রাচীন ও প্রাকৃতিক উপাদান নতুন করে ক্রেজ তৈরি করেছে—ঘি।
শুধু খাবারের টেবিলেই নয়, এখন স্কিনকেয়ার রুটিনেও ঘি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে দ্রুত। ঘিতে রয়েছে ভিটামিন A, D, E এবং অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বককে ভিতর থেকে পুষ্টি জোগায়। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, বলিরেখা কমায় এবং ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। বিউটি এক্সপার্টদের মতে, নিয়ম মেনে ঘি ব্যবহার করলে তা দামী অ্যান্টি–এজিং ক্রিমের মতোই কার্যকর হতে পারে।
কেন ত্বকের জন্য ঘি এত উপকারী?ঘিয়ের অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ত্বকের কোষকে ফ্রি–র্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যা বয়সের ছাপ পড়ার মূল কারণ। এছাড়াও এর ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা ত্বকের রুক্ষতা দূর করে এবং শুষ্ক শীতেও ত্বক রাখে নরম ও টানটান।
ত্বকের পরিচর্যায় ঘি ব্যবহারের কার্যকর উপায়১. ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ঘিরাতে ঘুমানোর আগে হাতে ২–৩ ফোঁটা খাঁটি ঘি নিয়ে বৃত্তাকারে মুখে মালিশ করুন।১৫ মিনিট পর ঈষদুষ্ণ জলে মুখ ধুয়ে নিন।এটি ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা যোগায় এবং ত্বককে নরম, টানটান ও উজ্জ্বল করে।
২. চোখের নিচের কালি দূর করতে১ চামচ ঘির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন।রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।৭–১০ দিনেই ডার্ক সার্কেল অনেকটাই হালকা হবে।
৩. র্যাশ বা ব্রণর সমস্যা কমাতেঘির সঙ্গে চিনি, বেকিং সোডা, লেবুর রস ও সামান্য হলুদ মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করুন।এটি মুখের মৃত কোষ দূর করে, রন্ধ্র পরিষ্কার করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
৪. ঘি ফেসপ্যাক½ চামচ ঘি + ১ চামচ বেসন + সামান্য দুধভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।সপ্তাহে ২–৩ দিন ব্যবহার করলে—
দাগছোপ হালকা হয়ত্বক উজ্জ্বল হয়বলিরেখা কমে
কেন ঘি ‘অ্যান্টি-এজিং’ হিসেবে এত কার্যকর?
ঘিয়ের ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের কোলাজেনকে শক্তিশালী করে, ফলে ত্বক হয় টানটান ও বয়সের ছাপ পড়তে সময় লাগে।এছাড়া ঘি ত্বকের কোষ পুনরুজ্জীবিত করে এবং প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরিয়ে আনে।
যাদের খুব অয়েলি বা অতিরিক্ত ব্রণপ্রবণ ত্বক, তাদের ঘি অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।নকল বা মেশানো ঘি ব্যবহার করা যাবে না—শুধু খাঁটি ঘি ব্যবহার করতে হবে।প্রথমবার ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করা ভালো।
দামী ক্রিম বা কেমিক্যালযুক্ত স্কিনকেয়ার পণ্যের চেয়ে ঘি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প। নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে শুষ্ক শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে বলিরেখা কমানো—সবকিছুতেই ঘি হতে পারে আপনার সবচেয়ে সস্তা ও কার্যকর বিউটি সিক্রেট।