মাথায় ধরা-ব্যথা হলে অনেকেই কফি খেয়ে থাকেন। তবে যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই সময় কফি খেলে আচমকা মাথা যন্ত্রণা বেড়ে যায়। তবে এবার সে ধারণায় পরিবর্তন আসতে চলেছে।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন নামের বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি চীনা গবেষণাপত্রের দাবি, নিয়মিত বেশি পরিমাণে কফি খেলে মাইগ্রেন অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে অনেকটাই।
বিশেষ করে যাদের মাইগ্রেনের সঙ্গে ‘অরা’ আছে, তারা দারুণ উপকৃত হন কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইনের কারণে।
‘অরা’ কী
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মাইগ্রেন আছে, এমন রোগীদের ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাইগ্রেন অ্যাটাক হওয়ার আগে ও অ্যাটাকের সময়ে তাদের চোখের সামনে মাঝেমধ্যে ব্ল্যাক-আউট হয়, তাদের হাত-পা ঝিনঝিন করে, আলো-গন্ধ-আওয়াজের প্রতি তাদের তীব্র বিরক্তি থাকে এবং প্রভৃত গ্যাস-অম্বল হয়। এই গবেষণা দেখাচ্ছে, মাইগ্রেন সামলাতে কফি সবচেয়ে ভালো কাজ করে তাদেরই ক্ষেত্রে।
চীনের নানচাং বিশ্ববিদ্যালয়ের আট গবেষক অবশ্য শুধু মাইগ্রেন নিয়ে গবেষণাটা শুরু করেননি।
তারা দেখতে চেয়েছিলেন, অ্যালঝাইমার্স, অ্যামাইট্রপিক ল্যাটারেল স্ক্লেরোসিস, মাইগ্রেন, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, পার্কিনসন্স, স্ট্রোক ইত্যাদির মতো স্নায়বিক অসুখে কেমন কাজ করে কফি।
যন্ত্রণা, খিঁচুনি, অঙ্গ সঞ্চালন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কফির মধ্যে বিপুল পরিমাণে থাকা ক্যাফেইন কতটা কার্যকর, সেটাই দেখতে চেয়েছিলেন তারা। এক দশক ধরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে তারা দেখেন, অন্য কোনো স্নায়ুরোগকে বাগে আনতে না পারলেও, মাইগ্রেনে রাশ টানতে সক্ষম কফি।
তবে কফি খেলেই হবে না।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এই গবেষণাটিতে দেখা গেছে, দৈনিক ২০০ গ্রাম করে কফি খেতে হবে। তা হলেই মাইগ্রেন অ্যাটাক এড়ানো সম্ভব অনেকাংশে।’
তিনি জানান, ‘আমাদের দেশের মানুষেরা যে পরিমাণে কফি খেতে অভ্যস্ত, সেই কম পরিমাণ কফি মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে তেমন কাজে আসবে না।’ আরেক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘ক্যাফেইনের কার্যকারিতা অজানা নয়। তাই মাইগ্রেনের ওষুধে প্যারাসিটামলের সঙ্গে ক্যাফেইন রাখা হয় কম্বিনেশনে।
রক্তবাহিকার ফুলে ওঠা অনেকটা কমিয়ে দেয় ক্যাফেইন।’
তবে এই স্টাডির আরো একটি সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সেটি হলো, গবেষণাটি করা হয়েছে মূলত ইউরোপিয়ানদের নিয়ে। ফলে আমেরিকান, আফ্রিকান কিংবা এশিয়ানদের ক্ষেত্রে কফি কতটা প্রভাব ফেলবে মাইগ্রেনে, তা বলা মুশকিল।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চা-তেও ক্যাফেইন থাকে। তবে তা কফির তুলনায় প্রায় অর্ধেক। বড় এক মগ কফিতে যেখানে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, এক মগ চায়ে সেখানে ক্যাফেইন থাকে বড়জোর ৫০ মিলিগ্রাম। তাই চা খেয়ে মাইগ্রেন তাড়ানো একপ্রকার অসম্ভব।
তবে এতটা কফি একসঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস সাধারণভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের নেই। তাই ২০০ গ্রাম কফি একজন সাধারণ মানুষ কতটা খেতে পারবেন, সংশয় রয়েছে চিকিৎসকদের।