ওজন কমানো থেকে শুরু করে রক্তচাপ, উচ্চ শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হজম প্রক্রিয়া—হাঁটা সবকিছুতেই দারুণ প্রভাব ফেলে। তবে একটা প্রশ্ন আমাদের মনে প্রায়ই ঘুরে আসে সকালে হাঁটা ভালো, নাকি সন্ধ্যায়? হাঁটা সবচেয়ে সহজ ও সবার জন্য মানানসই ব্যায়াম। খরচ নেই, জটিলতা নেই, কিন্তু উপকারের পরিমাণ অনেক। সংক্ষেপে বললে দুটো সময়ই ভালো। তবে সময়ভেদে উপকারের ধরন কিছুটা আলাদা।
চলুন, সহজ ভাষায় দেখে নেওয়া যাক কোন সময়ে হাঁটলে কী উপকার পাওয়া যায়
সকালের হাঁটা:
সকালবেলার হাঁটার আলাদা একটা নেশা আছে। হালকা ঠান্ডা বাতাস, চারপাশের শান্ত পরিবেশ আর নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় এই মিলেমিশে দিনের শুরুটা যেন একটু বেশি সুন্দর হয়। বিজ্ঞানের খাতায়ও সকালের হাঁটার কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে।
১. খালি পেটে হাঁটলে শরীরে জমা চর্বি এনার্জি হিসেবে ব্যবহার হয়
রাতভর না খেয়ে থাকার পর সকালের হাঁটায় শরীর ফ্যাট বার্নিং মোডে ঢুকে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে হাঁটা বা হালকা ব্যায়ামে চর্বি পোড়ানো কিছুটা বাড়ে। যদিও প্রভাব খুব বিশাল নয়, তবে নিয়মিত হলে দীর্ঘমেয়াদে কাজ দেয়।
২. সকালের রুটিন হলে নিয়ম ভাঙা কঠিন হয়
দিনের শুরুতেই হাঁটা শেষ করলে ব্যস্ততা ব্যায়ামকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের ব্যায়ামকারীরা অভ্যাস দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারেন।
৩. শরীরঘড়ির সঙ্গে মিল খায়, ঘুম–জাগরণের ছন্দ ঠিক হয়
সকালের হাঁটা শরীরের জৈবঘড়িকে সক্রিয় করে। যাদের ঘুম এলোমেলো বা সকালে উঠতে কষ্ট হয় তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।
তবে সকালের হাঁটা কোনো যাদুকরি সমাধান নয়। অতিরিক্ত ফ্যাট লস হবে এমন ভাবা ভুল। কিন্তু নিয়ম গড়তে এটি সবচেয়ে কার্যকর।
সন্ধ্যার হাঁটা:
সন্ধ্যার হাঁটার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ। অনেক গবেষণা বলছে, খাবার শেষে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলে রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়তে পারে না। যাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, প্রিডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আছে—তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর।
১. হাঁটলে পেশি সরাসরি রক্ত থেকে চিনি টেনে নেয়
পেশির নড়াচড়া ইনসুলিন ছাড়াই রক্তের গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে। তাই খাবারের পর হাঁটলে রক্তে শর্করা দ্রুত কমে এবং স্থিতিশীল থাকে।
২. রাতের নাস্তার লোভ কমে
হাঁটার পর অনেকেরই অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়, যা ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. স্ট্রেস কমে, ঘুম ভালো হয়
সন্ধ্যার হালকা হাঁটা মন শান্ত করে, কর্টিসল কমায় এবং ঘুম সহজ করে। তবে শোবার ঠিক আগে খুব জোরে হাঁটা ঘুমের ক্ষতি করতে পারে।
বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি বা গ্লুকোজ ওঠানামা বেশি তাদের জন্য সন্ধ্যার হাঁটার উপকার আরও স্পষ্ট।
তাহলে কোন সময় হাঁটা বেশি কার্যকর সকাল না সন্ধ্যা?
গবেষণাগুলো এই বিষয়ে পুরোপুরি একমত নয়। কেউ বলছে সকালে ফ্যাট কমে দ্রুত, কেউ বলছে সন্ধ্যায় গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ বেশি ভালো। তবে সবাই একমত একটি বিষয়ে ওজন কমাতে ‘কখন হাঁটা হচ্ছে’ নয়, বরং ‘কতটা নিয়ম করে হাঁটা হচ্ছে’—সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের জন্য সঠিক সময় বেছে নেওয়ার উপায়:
লক্ষ্য যদি ফ্যাট লস ও অভ্যাস গড়া হয়, সকালের হাঁটা ভালো।
রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণ চাইলে খাবারের ১০–৩০ মিনিট পরে হাঁটা সেরা।
স্ট্রেস কমাতে ও ঘুম ভালো করতে সন্ধ্যার হালকা হাঁটা উপকারী।
রুটিন এলোমেলো হলে যে সময় পাওয়া যায়, সেই সময়টাই সেরা।