ইতিহাস দেখাচ্ছে, ১০০–১৫০ বছরের ব্যবধানে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটে। বাংলাদেশ ও তার আশপাশে সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৩০ সালে।
গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৭ এবং উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলেও তীব্র কম্পনের কারণে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রিখটার স্কেলে ৬ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশে ইতিহাসবাহী বড় ভূমিকম্পের মধ্যে রয়েছে ১৭৬২ সালের ‘গ্রেট আরাকান আর্থকোয়েক’, যার মাত্রা ছিল ৮.৫। এতে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া ১৮৯৭ সালে আসামে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায় ৭.৬, ১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়িতে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ভূমিকম্প প্রায় ১৫০ বছরের ব্যবধানে ফিরে আসে। এই হিসেব অনুযায়ী, ৭ মাত্রার পরবর্তী ভূমিকম্পের জন্য সময় হয়ে গেছে।
ঢাকা শহরে মোট ২১ লাখ ভবন আছে, এর মধ্যে ছয় লাখ ভবন ছয়তলার ওপর। বড় ভূমিকম্পের সময় এই ছয় লাখ ভবন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে।
আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত—ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা। দেশের ভিতরে ও আশেপাশে বড় বড় ফল্ট রয়েছে। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ আলাদা প্লেট টেকটোনিকের উপর ভেসে থাকে, এবং যখন এই প্লেটগুলো নড়াচড়া করে বা ধাক্কা দেয়, তখন ভূ-পৃষ্ঠে শক্তি সঞ্চিত হয়। এই শক্তি শিলার ধারণ ক্ষমতার বাইরে গেলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ফল্ট লাইনের মধ্যে অন্যতম হলো ডাউকি ফল্ট, যা শেরপুর থেকে শুরু করে জাফলং হয়ে ভারতের করিমগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।
অন্য দিকে আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, শুক্রবারের ভূমিকম্পটি মধ্যম বা মডারেট মাত্রার ছিল। শক্তি বেশি না হলেও অনুভূতি তীব্র ছিল। আপাতত আফটারশকের কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরও বলেন, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কিছু সময় আফটারশকের শঙ্কা থাকে, তবে সব সময় তা তীব্র হয় না।