শুক্রবার সকালে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার পরপরই সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে নরসিংদীর মাধবদীতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বহু ক্ষেত্রে আগাম বার্তা দেওয়া সম্ভব হলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে তেমনটি হয় না। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে ভূপৃষ্ঠে কম্পন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহারকারীদের সতর্কবার্তা জানাতে সক্ষম কিছু প্রযুক্তি-নির্ভর সিস্টেম এখন সহজলভ্য। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় মাধ্যম হলো গুগলের আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম এবং আরও কয়েকটি নির্ভরযোগ্য অ্যাপ্লিকেশন।
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য গুগলের আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের দ্রুত ভূমিকম্পের বার্তা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে গুগল ২০২০ সালে এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থাটি উন্মোচন করে।
সতর্কীকরণ প্রক্রিয়া:
স্মার্টফোনের অভ্যন্তরে থাকা সূক্ষ্ম অ্যাক্সিলোমিটার সেন্সরগুলো ভূপৃষ্ঠের কম্পন শনাক্ত করে। এই শনাক্তকৃত তথ্য দ্রুত গুগলের সার্ভারে প্রেরিত হয়, এবং সেখান থেকে আশপাশের ব্যবহারকারীদের কাছে জরুরি সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এই অ্যালার্ট সিস্টেমটি কেবল ভূমিকম্পের উৎস, মাত্রা এবং নিকটবর্তী অবস্থানই জানায় না, পাশাপাশি নিরাপদে থাকার জন্য জরুরি পরামর্শও দিয়ে থাকে।
সহজে সতর্কবার্তা সক্রিয় করার পদ্ধতি:
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে এই গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তাটি চালু করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
১. আপনার ফোনের সেটিংস (Settings) মেনুতে প্রবেশ করুন।
২. নিরাপত্তা ও জরুরি অবস্থা (Safety and Emergency) অপশনটি খুঁজে নিয়ে তাতে যান।
৩. সেখান থেকে ভূমিকম্পের সতর্কতা (Earthquake Alerts) নির্বাচন করে এই সুবিধাটি অবিলম্বে সক্রিয় করে দিন।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকারী অন্যান্য নির্ভরযোগ্য অ্যাপ
গুগলের নিজস্ব ব্যবস্থা ছাড়াও আরও কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্পের তথ্য ও তাৎক্ষণিক সতর্কতা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
১. মাই আর্থকোয়েক অ্যালার্টস (My Earthquake Alerts)
এই মনিটরিং অ্যাপ্লিকেশনটি বিশ্বব্যাপী এক কোটিরও বেশি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জন করেছে। এটি তাৎক্ষণিক কম্পন, পূর্ববর্তী ভূমিকম্পের সবিস্তার রেকর্ডসহ বিভিন্ন জরুরি তথ্য সরবরাহ করে। অ্যাপ্লিকেশনটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস (iOS) উভয় ব্যবহারকারীর জন্য বিনামূল্যে ডাউনলোডের সুযোগ রয়েছে।
২. মাইশেক অ্যাপ (MyShake App)
মাইশেক অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের গবেষকেরা। এটিও স্মার্টফোনের সেন্সর ব্যবহার করে রিয়েল-টাইমে ভূমিকম্প শনাক্ত করে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে। এটি একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম কারণ এটি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে অংশ নিতে দেয়, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মূল্যবান কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগে। মাইশেক বর্তমানে প্রায় দশ লক্ষ মানুষের ব্যবহৃত একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সুপরিচিত, যা বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১:গুগল আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেমটি কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: এই সিস্টেমটি স্মার্টফোনে থাকা ক্ষুদ্র অ্যাক্সিলোমিটার সেন্সর ব্যবহার করে ভূপৃষ্ঠের কম্পন শনাক্ত করে গুগলের সার্ভারে পাঠায়। এরপর দ্রুততম সময়ে আশপাশের ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয়।
প্রশ্ন ২:অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ভূমিকম্প সতর্কতা চালু করার সহজ ধাপগুলো কী কী?
উত্তর: আপনার ফোনের সেটিংস (Settings) এ গিয়ে Safety and Emergency (নিরাপত্তা ও জরুরি অবস্থা) অপশনে প্রবেশ করুন, তারপর Earthquake Alerts (ভূমিকম্পের সতর্কতা) নির্বাচন করে তা সক্রিয় করুন।
প্রশ্ন ৩:গুগল ছাড়া অন্য কোন নির্ভরযোগ্য অ্যাপ ভূমিকম্পের সতর্কতা দেয়?
উত্তর: মাই আর্থকোয়েক অ্যালার্টস (My Earthquake Alerts) এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের তৈরি মাইশেক অ্যাপ (MyShake App) এই ধরণের রিয়েল-টাইম সতর্কতা ও তথ্য সরবরাহ করে।
প্রশ্ন ৪:ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস কি স্মার্টফোনের মাধ্যমে জানা সম্ভব?
উত্তর: ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব নয়। তবে ভূপৃষ্ঠে কম্পন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি–নির্ভর এই সিস্টেমগুলো ব্যবহারকারীদের দ্রুত সতর্কবার্তা পাঠাতে সক্ষম।