ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকর্নু পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রিসভা ঘোষণা হওয়ার আগেই হঠাৎ এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলিসি প্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠকের পর লেকর্নু তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সেবাস্তিয়েন লেকর্নু নিয়োগ পাওয়ার মাত্র ২৬ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেয়ারুর সরকারের পতনের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তবে তার মন্ত্রিসভা প্রায় পুরোনো কাঠামোরই পুনরাবৃত্তি ছিল, যা জাতীয় পরিষদের বিভিন্ন দলের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
মন্ত্রিসভা নিয়ে বিতর্ক
বিরোধীরা অভিযোগ তোলে, নতুন সরকার পুরোনো মুখগুলোর পুনঃস্থাপন মাত্র। অনেকে সংসদে সেই মন্ত্রিসভা প্রত্যাখ্যানের হুমকি দেয়। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই তিনি দায়িত্ব নেওয়ার এক দিনেরও কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করলেন।
আগাম নির্বাচন ও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি
বর্তমানে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগাম নির্বাচন চাচ্ছে। এমনকি চরম ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি-এর শীর্ষ নেতা সেবাস্তিয়েন শেনু বলেন,
“এখন ম্যাক্রোঁর দুটি পথ— সংসদ ভেঙে দেওয়া অথবা নিজে পদত্যাগ করা।”
তবে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৭ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি পদত্যাগ করবেন না।
অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২০২৪ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত আগাম নির্বাচনের পর ফ্রান্সে একটি ঝুলন্ত সংসদ গঠিত হয়, যার ফলে সরকার কার্যকরভাবে আইন পাস করতে পারছে না। গত সেপ্টেম্বরে সংসদ কঠোর কৃচ্ছ্র বাজেট প্রত্যাখ্যান করার পর বেয়ারুর সরকার পতন ঘটে।
বাজেট ঘাটতি ও ঋণের বোঝা
২০২৪ সালে ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি দাঁড়ায় জিডিপির ৫.৮ শতাংশ, এবং জাতীয় ঋণ বাড়ে জিডিপির ১১৪ শতাংশে— যা ইউরোজোনে গ্রিস ও ইতালির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই মুহূর্তে ফ্রান্সে প্রতি নাগরিকের গড় ঋণ প্রায় ৫০ হাজার ইউরো।
অর্থবাজারে নেতিবাচক প্রভাব
লেকর্নুর পদত্যাগের খবর প্রকাশের পরই প্যারিস শেয়ারবাজারে শেয়ারমূল্যের পতন লক্ষ্য করা গেছে, যা অর্থনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।