ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে ভাইরাল জ্বর, নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সংক্রমণ ঘটছে। সর্দি-কাশি, পেটের গোলমাল সহজে সারতে চাইছে না। জ্বর কমার পরেও ক্লান্তি, গা-হাত-পায়ে ব্যথা এবং খাবার গিলতে কষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা ভোগায়।
এই সময়ে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে খানিক নজর দিলেই হঠাৎ আসা অসুখের আক্রমণ দূর করা সম্ভব। খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এই সময়ের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
জ্বরের সময়ে এবং অসুস্থতার প্রথম দিকে হালকা ও পুষ্টিকর খাবারই বেশি খেতে হবে। এই সময়ে সবথেকে ভালো হলো স্যুপ। সবজি দিয়ে তৈরি হালকা স্যুপ অথবা চিকেন স্যুপে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকে, যা পুষ্টির জোগান দেয়।
মুসুর ডাল দিয়েও স্যুপ তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে—ভিজিয়ে রাখা ডাল এবং পছন্দসই সবজি, যেমন পেঁয়াজ, আদা, টম্যাটো সামান্য ঘি দিয়ে সেদ্ধ করে লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে দ্রুত আরাম মেলে। হালকা খাবারের পাশাপাশি টাটকা ফলের রস বানিয়ে খেতে পারেন।
পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আনারসের টুকরো ও পুদিনা পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। তবে এই সময়ে দুধ-চিনি দেওয়া চা বা কফি এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এতে ক্যাফিনের মাত্রা বাড়ে এবং শরীরে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। এর বদলে গ্রিন টি বা তুলসী ও দারুচিনির মতো ভেষজ চা দু’বেলা খেলে আরাম পাওয়া যায়।
তুলসী পাতা ফুটিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে তৈরি তুলসী চা এবং দারচিনি গুঁড়ো, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে তৈরি দারচিনির চা—উভয়ই ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর, যা শরীরকে রোগমুক্তিতে সাহায্য করে।
বার্ধক্য থামাতে ন্যানোফ্লাওয়ার প্রযুক্তি আবিষ্কার
জ্বর সেরে যাওয়ার পরেও ক্লান্তি ও মুখে অরুচি থেকে যায়, যা কাটাতে সঠিক খাবার জরুরি। এই সময়ে প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ ডাবের জল দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীরের জল ও খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে দারুণ কার্যকর।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এই সময়ে শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে—যেমন, ডিমের সাদা অংশ, চর্বি বাদ দেওয়া মাছ ও মুরগির মাংস, দুধ ও দই। নিরামিষাশীরা ছোলা, মুসুর ডাল, সয়াবিন ও নানা রকম বাদাম খেতে পারেন।
এছাড়া, হজম দ্রুত করার জন্য খিচুড়ি, ওট্স খাওয়া ভালো। ভাতের সঙ্গে পাতলা করে রান্না করা মাছের ঝোলও খাওয়া যেতে পারে। গলা ব্যথা বা কাশি কমানোর জন্য মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে; প্রতিদিন সকালে পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
তবে কিছু খাবার এই সময়ে একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন নরম পানীয়, চকোলেট বা আইসক্রিম খাওয়া চলবে না। ফ্রিজে রেখে দেওয়া পাউরুটি, বাসি খাবার বা চিপস, সস, জাঙ্ক ফুড, যে কোনও প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
রাস্তায় বিক্রি হওয়া লাচ্ছি বা শরবতও এই সময়ে খাওয়া উচিত নয়। খাদ্যাভ্যাসে এই সামান্য পরিবর্তনগুলি আনলেই ভাইরাল জ্বর বা অন্যান্য সংক্রমণের দুর্বলতা কাটিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।